
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাইকগাছা কৃষি কলেজকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হিসেবে বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এবং ২০২৬ সালের জুন মাসে ক্যাম্পাসটি উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগ কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম খুলনা গেজেটকে জানান, সরকারের সরাসরি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৫ একর জমির উপর নির্মিত এই ক্যাম্পাসে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসন, খেলার মাঠ, মসজিদ, শহীদ মিনারসহ একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাঙ্গনের সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
উপাচার্য আরও জানান, জমির নামজারি ও খাজনা পরিশোধের কাজ ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রস্তাবিত বিভাগগুলো হচ্ছে—এগ্রিকালচারাল সায়েন্স, ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট্রি ও টেকসই বন ব্যবস্থাপনা এবং মেরিন ফিসারিজ। এসব বিভাগ চালু হলে দেশের কৃষি ও উপকূলীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার একটি বড় সুযোগ তৈরি হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করা প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী এখানে বিএসসি ও অন্যান্য উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নের সুযোগ পাবে। এটি শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চতর ডিগ্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
উপাচার্য বলেন, “মূল ক্যাম্পাসে সাধারণত ইন্টারমিডিয়েট পাশ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, কিন্তু পাইকগাছা ক্যাম্পাসে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সমমানের ডিগ্রি চালু করা হবে। শিক্ষার মানের কোনো আপস করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “পাইকগাছা উপকূলীয় একটি বিশেষ অঞ্চল। এখানকার জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে কিছুটা বঞ্চিত ছিলো। এই ক্যাম্পাস শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ছাড়াও গবেষণামূলক কাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।”
উপকূলীয় এলাকায় পানির লবণাক্ততা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, কর্তৃপক্ষ এ সমস্যার সমাধানে বিশেষ পানি পরিশোধন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, পূর্বে পাইকগাছা কৃষি কলেজকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের পরিকল্পনা থাকলেও, পরবর্তীতে একাডেমিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল কলেজটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে।
এই নতুন ক্যাম্পাস খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।