০৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩৭ বছর পর নিকলীর হিমেল পাড়ি দিলেন ইংলিশ চ্যানেল

  • দিনার
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১২:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • 137

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিকলীর সন্তান হিমেল জয় করেছেন সাঁতারুদের ‘এভারেস্ট’ খ্যাত ইংলিশ চ্যানেল। দীর্ঘ প্রস্তুতি ও অদম্য চেষ্টার ফল হিসেবে ৩৭ বছর পর বাংলাদেশি হিসেবে সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক তারকা নাজমুল হক হিমেল। তাঁর এই কীর্তিতে নিকলীসহ পুরো কিশোরগঞ্জ জেলায় বইছে আনন্দের বন্যা।

 

নিকলীতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমেল ছোটবেলা থেকেই পানির সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর সাঁতারে হাতেখড়ি ১৯৯৭ সালে, পিতা আবুল হাসেমের হাতে, যিনি আশির দশকের জাতীয় সাঁতারু এবং নিকলী সুইমিং ক্লাবের কোচ। এরপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হিমেল সাঁতার শিখেছেন জাতীয় সাঁতারু মো. সোলায়মানের কাছ থেকে ১৯৯৮ সালে। এরপর তিন বছর জাপানি ও পরে চীনা কোচের অধীনে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

 

১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ও জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি অর্জন করেন ২৫টি স্বর্ণপদক, ১৯টি রৌপ্য এবং গড়েছেন ৬টি জাতীয় রেকর্ড। ২০০৮ সালে ইন্দো-বাংলা গেমসে জিতেছেন ১টি স্বর্ণ ও ২টি রৌপ্য।

 

বিকেএসপি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে হিমেল উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান চীনে। বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সেই সময় চীনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্য জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেন।

 

ইংলিশ চ্যানেল জয় তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন। তবে শীত প্রধান অঞ্চলের ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটা বাংলাদেশিদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেই বাধা পেরিয়ে হিমেল প্রস্তুতি নিয়েছেন নিকলীর বরফ ফ্যাক্টরিতে আইসবাথে, হাওরের পানি ও ড্রামে বরফ জমানো পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করে। এছাড়া সোয়াইজনী নদীতে নিয়মিত ৫-৭ কিলোমিটার সাঁতরে শারীরিক সহ্যক্ষমতা বাড়ান তিনি।

 

এই কঠিন প্রস্তুতির মাঝে সরকারি বা বেসরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও তিনি নিজস্ব অর্থায়নে এই যাত্রা সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ বিমানের সৌজন্যে টিকিটের সহযোগিতা পেলেও চ্যানেল পাড়ির জন্য তাঁর মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

 

নিকলীর কৃতী সাঁতারুদের অনুপ্রেরণা হিমেল। জাতীয় পর্যায়ের সাঁতারু নাদিমুল হক বলেন, “হিমেল ভাই আমাদের আদর্শ। আমরা চাই তাঁর মতো একদিন আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু হতে।”

 

জাতীয় স্বর্ণজয়ী জলকন্যা পুষ্প আক্তার বলেন, “ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়া শুধু সাহস নয়, এটি বাংলাদেশের গৌরব।”

 

নিকলী সুইমিং ক্লাবের কোচ জুবায়ের আহমেদ বলেন, “হিমেল আমাদের গর্ব। সরকার যদি সহযোগিতা করত, তাহলে এই বিজয় আরও বড় হতো।”

 

ইংলিশ চ্যানেল জয় সম্পর্কে হিমেল মোটোফোনে জানান “ব্রজেন দাস স্যার, আবদুল মালেক স্যার ও মোশাররফ হোসেন স্যারের পর আমিই বাংলাদেশি হিসেবে এই চ্যানেল জয় করেছি। এটা শুধু আমার নয়, দেশের গৌরব।” তিনি আরও  জানান, ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পানিতে সাঁতার কাটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল।

 

নিকলীতে সাঁতারের সূচনা করেন আবুল হাসেম। তাঁর অনুপ্রেরণায় সাঁতারে এগিয়ে আসে বহু প্রতিভা। বিশেষ করে ১৯৯৩ সালে কারার মিজানের সাফ গেমসে সোনা জয় সাঁতারকে জনপ্রিয় করে তোলে। সেই ধারাবাহিকতায় হিমেল আজ দেশের গৌরব। তাঁর কীর্তিতে গর্বিত কিশোরগঞ্জ তথা পুরো বাংলাদেশ।

 

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

নাগেশ্বরীতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার

৩৭ বছর পর নিকলীর হিমেল পাড়ি দিলেন ইংলিশ চ্যানেল

পোস্ট হয়েছেঃ ১২:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিকলীর সন্তান হিমেল জয় করেছেন সাঁতারুদের ‘এভারেস্ট’ খ্যাত ইংলিশ চ্যানেল। দীর্ঘ প্রস্তুতি ও অদম্য চেষ্টার ফল হিসেবে ৩৭ বছর পর বাংলাদেশি হিসেবে সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক তারকা নাজমুল হক হিমেল। তাঁর এই কীর্তিতে নিকলীসহ পুরো কিশোরগঞ্জ জেলায় বইছে আনন্দের বন্যা।

 

নিকলীতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমেল ছোটবেলা থেকেই পানির সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর সাঁতারে হাতেখড়ি ১৯৯৭ সালে, পিতা আবুল হাসেমের হাতে, যিনি আশির দশকের জাতীয় সাঁতারু এবং নিকলী সুইমিং ক্লাবের কোচ। এরপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হিমেল সাঁতার শিখেছেন জাতীয় সাঁতারু মো. সোলায়মানের কাছ থেকে ১৯৯৮ সালে। এরপর তিন বছর জাপানি ও পরে চীনা কোচের অধীনে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

 

১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ও জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি অর্জন করেন ২৫টি স্বর্ণপদক, ১৯টি রৌপ্য এবং গড়েছেন ৬টি জাতীয় রেকর্ড। ২০০৮ সালে ইন্দো-বাংলা গেমসে জিতেছেন ১টি স্বর্ণ ও ২টি রৌপ্য।

 

বিকেএসপি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে হিমেল উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান চীনে। বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সেই সময় চীনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্য জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেন।

 

ইংলিশ চ্যানেল জয় তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন। তবে শীত প্রধান অঞ্চলের ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটা বাংলাদেশিদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেই বাধা পেরিয়ে হিমেল প্রস্তুতি নিয়েছেন নিকলীর বরফ ফ্যাক্টরিতে আইসবাথে, হাওরের পানি ও ড্রামে বরফ জমানো পানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করে। এছাড়া সোয়াইজনী নদীতে নিয়মিত ৫-৭ কিলোমিটার সাঁতরে শারীরিক সহ্যক্ষমতা বাড়ান তিনি।

 

এই কঠিন প্রস্তুতির মাঝে সরকারি বা বেসরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও তিনি নিজস্ব অর্থায়নে এই যাত্রা সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ বিমানের সৌজন্যে টিকিটের সহযোগিতা পেলেও চ্যানেল পাড়ির জন্য তাঁর মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

 

নিকলীর কৃতী সাঁতারুদের অনুপ্রেরণা হিমেল। জাতীয় পর্যায়ের সাঁতারু নাদিমুল হক বলেন, “হিমেল ভাই আমাদের আদর্শ। আমরা চাই তাঁর মতো একদিন আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু হতে।”

 

জাতীয় স্বর্ণজয়ী জলকন্যা পুষ্প আক্তার বলেন, “ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়া শুধু সাহস নয়, এটি বাংলাদেশের গৌরব।”

 

নিকলী সুইমিং ক্লাবের কোচ জুবায়ের আহমেদ বলেন, “হিমেল আমাদের গর্ব। সরকার যদি সহযোগিতা করত, তাহলে এই বিজয় আরও বড় হতো।”

 

ইংলিশ চ্যানেল জয় সম্পর্কে হিমেল মোটোফোনে জানান “ব্রজেন দাস স্যার, আবদুল মালেক স্যার ও মোশাররফ হোসেন স্যারের পর আমিই বাংলাদেশি হিসেবে এই চ্যানেল জয় করেছি। এটা শুধু আমার নয়, দেশের গৌরব।” তিনি আরও  জানান, ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পানিতে সাঁতার কাটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল।

 

নিকলীতে সাঁতারের সূচনা করেন আবুল হাসেম। তাঁর অনুপ্রেরণায় সাঁতারে এগিয়ে আসে বহু প্রতিভা। বিশেষ করে ১৯৯৩ সালে কারার মিজানের সাফ গেমসে সোনা জয় সাঁতারকে জনপ্রিয় করে তোলে। সেই ধারাবাহিকতায় হিমেল আজ দেশের গৌরব। তাঁর কীর্তিতে গর্বিত কিশোরগঞ্জ তথা পুরো বাংলাদেশ।