০৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে পুলিশের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা, সন্দেহভাজন আটক ৭

বরিশাল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়ি ভাঙচুরসহ তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুত্বর জখমের পর একজন নিহতের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পাশাপাশি হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার।
সূত্রমতে, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্ধের জেরধরে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি গ্রামের নজির সিকদারের ছেলে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সিকদার লিটুকে (৪২) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ নিহতের ছোট ভাই সুমন সিকদার (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগমকে (৩৮) কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলাকারীরা লিটুর ঘরে ভাঙচুরসহ লুট করে তার মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মুন্নি বেগম জানান, একই গ্রামের বাসিন্দা তার স্বামী জাকির হোসেন গাজী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেন।
এনিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ হয়। সম্প্রতি তিনি ও তার স্বামী পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। মামলার আসামি হিসেবে বৃহস্পতিবার আদালত থেকে তারা জামিন নিয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের সহায়তায় বাড়িতে আসেন।
তখন পুলিশের সামনে একদল লোক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘর ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। এসময় তার ভাই লিটন সিকদার লিটুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ তাদের কুপিয়ে জখম করা হয়।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লিটন সিকদার লিটুর বাড়িতে হামলা করছে একদল লোক। তখন এয়ারপোর্ট থানার এসআই শহীদুল ইসলাম পিকআপে উঠে যাচ্ছে।
এ সময় একজন লোক তাকে বলছে- আপনি এ পরিস্থিতিতে কোথায় যাচ্ছেন। আপনি ওকে (লিটু) গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান, নয়তো লিটুকে মেরে ফেলা হবে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এসআই শহীদুল ইসলামের সামনে বসেই উত্তেজিত লোকজন লিটুর বাড়ি ভাঙচুর করছে।
এ ব্যাপারে এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি লিটুর বোনের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। আমি চলে আসার পর হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে দ্বিতীয়বার ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছি।
নিহত লিটুর ঘনিষ্টজনেরা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনার শুরুর দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলেই ছিল, তাদের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও থাকেনি।
পরে হামলা শুরু হলে আমরা সবাই ঘরের মধ্যে আশ্রয় নেই কিন্তু হামলাকারীরা দরজা-জানালা ভেঙে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে হামলা চালায়। ওইসময় পুলিশকে ফোন করা হলেও তারা আসেনি। হামলার শেষ পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কুপিয়ে লিটুর একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্নস্থানে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ও বোনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এয়ারপোর্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার বলেন, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
আমার পক্ষে যা করার মামলা নেয়া। স্বামী ও স্ত্রী দুইপক্ষের মামলা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিয়ে গ্রামে দুইটি পক্ষ হয়েছে।জাকিরের পক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুরসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এরমধ্যে লিটু নিহত হয়েছে।দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরপূর্বে লিটু ও তার লোকজনে জাকির সিকদারকে আটক করে মারধরসহ বিদ্যুত শক দিয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

ঝিনাইদহে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন

বরিশালে পুলিশের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা, সন্দেহভাজন আটক ৭

পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:১৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
বরিশাল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়ি ভাঙচুরসহ তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুত্বর জখমের পর একজন নিহতের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পাশাপাশি হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার।
সূত্রমতে, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্ধের জেরধরে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি গ্রামের নজির সিকদারের ছেলে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সিকদার লিটুকে (৪২) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ নিহতের ছোট ভাই সুমন সিকদার (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগমকে (৩৮) কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলাকারীরা লিটুর ঘরে ভাঙচুরসহ লুট করে তার মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মুন্নি বেগম জানান, একই গ্রামের বাসিন্দা তার স্বামী জাকির হোসেন গাজী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেন।
এনিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ হয়। সম্প্রতি তিনি ও তার স্বামী পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। মামলার আসামি হিসেবে বৃহস্পতিবার আদালত থেকে তারা জামিন নিয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের সহায়তায় বাড়িতে আসেন।
তখন পুলিশের সামনে একদল লোক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘর ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। এসময় তার ভাই লিটন সিকদার লিটুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ তাদের কুপিয়ে জখম করা হয়।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লিটন সিকদার লিটুর বাড়িতে হামলা করছে একদল লোক। তখন এয়ারপোর্ট থানার এসআই শহীদুল ইসলাম পিকআপে উঠে যাচ্ছে।
এ সময় একজন লোক তাকে বলছে- আপনি এ পরিস্থিতিতে কোথায় যাচ্ছেন। আপনি ওকে (লিটু) গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান, নয়তো লিটুকে মেরে ফেলা হবে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এসআই শহীদুল ইসলামের সামনে বসেই উত্তেজিত লোকজন লিটুর বাড়ি ভাঙচুর করছে।
এ ব্যাপারে এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি লিটুর বোনের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। আমি চলে আসার পর হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে দ্বিতীয়বার ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছি।
নিহত লিটুর ঘনিষ্টজনেরা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনার শুরুর দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলেই ছিল, তাদের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও থাকেনি।
পরে হামলা শুরু হলে আমরা সবাই ঘরের মধ্যে আশ্রয় নেই কিন্তু হামলাকারীরা দরজা-জানালা ভেঙে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে হামলা চালায়। ওইসময় পুলিশকে ফোন করা হলেও তারা আসেনি। হামলার শেষ পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কুপিয়ে লিটুর একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্নস্থানে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ও বোনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এয়ারপোর্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার বলেন, পারিবারিক বিরোধ নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
আমার পক্ষে যা করার মামলা নেয়া। স্বামী ও স্ত্রী দুইপক্ষের মামলা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিয়ে গ্রামে দুইটি পক্ষ হয়েছে।জাকিরের পক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুরসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এরমধ্যে লিটু নিহত হয়েছে।দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরপূর্বে লিটু ও তার লোকজনে জাকির সিকদারকে আটক করে মারধরসহ বিদ্যুত শক দিয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে।