০৬:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয় শতবর্ষে, শিক্ষার মানে ধস — উত্তরণের পথ খুঁজতে জরুরি অভিভাবক সমাবেশ

  • Miah Suleman
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০১:৫৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • 124
ময়মনসিংহ জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আঠারোবাড়ি এম সি উচ্চ বিদ্যালয় শতবর্ষ অতিক্রম করলেও শিক্ষা মানে চরম ধস দেখা যাচ্ছে — এমন বাস্তবতায় অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যালয় হল রুমে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী, সাবেক ছাত্রছাত্রী, ২০২৬ সালের পরীক্ষার্থীদের বৈধ অভিভাবকগণ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, “বিদ্যালয় শতবর্ষে পৌঁছালেও পাঠদানে অনাগ্রহ, শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন — সব মিলিয়ে এক গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”
অভিভাবকদের মধ্যে একজন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, “আমার সন্তান এখানে নিয়মিত ক্লাশ করছে, নৈতিক ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে বেড়ে উঠছে— এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” তবে সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে একজন বক্তার বক্তব্যে উঠে আসে, “যত শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হবে, ততটুকু করে শিক্ষকদের বেতন স্থগিত রাখার কথা বিবেচনা করা উচিত।” এই বক্তব্যটি অনেক অভিভাবক ও শিক্ষকের মাঝে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করে। তারা মনে করেন, ব্যর্থতার দায় শিক্ষকের ওপর চাপিয়ে দিলে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা ও সমাধান প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
যেখানে ঢাকা বোর্ড ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ফলাফল যা হয়েছে, সেটিই বাস্তব চিত্র। কোনো অতিরিক্ত নম্বর প্রদান করা হয়নি। বাস্তব মূল্যায়নের মাধ্যমেই এই ফল এসেছে।” (তথ্যসূত্র: RtvNews)
সরেজমিনে গিয়ে দেখা এবং যে বা যারা ছিলো তাদের বলতে শুনা যায়, সনাক্তকৃত সমস্যার মূল চিত্র- শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনায় অনাগ্রহ, শিক্ষকদের মধ্যে পরিকল্পনার অভাব ও দায়বদ্ধতার সংকট, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রশাসনিক দুর্বলতা, অভিভাবক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার মধ্যে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব।
সম্ভাব্য উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন একজন শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
1. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আধুনিকীকরণ
2. ছাত্রদের জন্য কাউন্সেলিং ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচি চালু
3. বিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে স্বচ্ছতা ও দলগত ঐক্য নিশ্চিত করা
4. অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী— তিন পক্ষের সমন্বয়ে মাসিক মতবিনিময় সভা চালু
5. প্রাক্তন ছাত্রদের অংশগ্রহণে “অ্যাডপ্ট-আ-ক্লাস” প্রোগ্রাম চালু করা
একশো বছরের শিক্ষা ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত এই বিদ্যালয় আজ এক চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে সম্মিলিত সচেতনতা, সমন্বিত উদ্যোগ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে বিদ্যালয়কে তার পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে দিতে। মতবিনিময় সভা ছিল সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে নিহত শহিদদের স্মরণে – সিরাজগঞ্জে সাইদুর রহমান বাচ্চু’র বৃক্ষ রোপণ

বিদ্যালয় শতবর্ষে, শিক্ষার মানে ধস — উত্তরণের পথ খুঁজতে জরুরি অভিভাবক সমাবেশ

পোস্ট হয়েছেঃ ০১:৫৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
ময়মনসিংহ জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আঠারোবাড়ি এম সি উচ্চ বিদ্যালয় শতবর্ষ অতিক্রম করলেও শিক্ষা মানে চরম ধস দেখা যাচ্ছে — এমন বাস্তবতায় অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যালয় হল রুমে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী, সাবেক ছাত্রছাত্রী, ২০২৬ সালের পরীক্ষার্থীদের বৈধ অভিভাবকগণ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, “বিদ্যালয় শতবর্ষে পৌঁছালেও পাঠদানে অনাগ্রহ, শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন — সব মিলিয়ে এক গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”
অভিভাবকদের মধ্যে একজন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, “আমার সন্তান এখানে নিয়মিত ক্লাশ করছে, নৈতিক ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে বেড়ে উঠছে— এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” তবে সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে একজন বক্তার বক্তব্যে উঠে আসে, “যত শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হবে, ততটুকু করে শিক্ষকদের বেতন স্থগিত রাখার কথা বিবেচনা করা উচিত।” এই বক্তব্যটি অনেক অভিভাবক ও শিক্ষকের মাঝে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করে। তারা মনে করেন, ব্যর্থতার দায় শিক্ষকের ওপর চাপিয়ে দিলে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা ও সমাধান প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
যেখানে ঢাকা বোর্ড ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ফলাফল যা হয়েছে, সেটিই বাস্তব চিত্র। কোনো অতিরিক্ত নম্বর প্রদান করা হয়নি। বাস্তব মূল্যায়নের মাধ্যমেই এই ফল এসেছে।” (তথ্যসূত্র: RtvNews)
সরেজমিনে গিয়ে দেখা এবং যে বা যারা ছিলো তাদের বলতে শুনা যায়, সনাক্তকৃত সমস্যার মূল চিত্র- শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনায় অনাগ্রহ, শিক্ষকদের মধ্যে পরিকল্পনার অভাব ও দায়বদ্ধতার সংকট, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রশাসনিক দুর্বলতা, অভিভাবক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার মধ্যে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব।
সম্ভাব্য উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন একজন শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
1. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আধুনিকীকরণ
2. ছাত্রদের জন্য কাউন্সেলিং ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচি চালু
3. বিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে স্বচ্ছতা ও দলগত ঐক্য নিশ্চিত করা
4. অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী— তিন পক্ষের সমন্বয়ে মাসিক মতবিনিময় সভা চালু
5. প্রাক্তন ছাত্রদের অংশগ্রহণে “অ্যাডপ্ট-আ-ক্লাস” প্রোগ্রাম চালু করা
একশো বছরের শিক্ষা ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত এই বিদ্যালয় আজ এক চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে সম্মিলিত সচেতনতা, সমন্বিত উদ্যোগ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে বিদ্যালয়কে তার পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে দিতে। মতবিনিময় সভা ছিল সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।