০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, প্রতিটি মা হোক মর্যাদার অধিকারী

  • আইয়ুব আলী
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:৩৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • 612

২৮/০৫/২০২৫ইং…

মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, প্রতিটি মা হোক মর্যাদার অধিকারী |

একজন মা শুধু একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেন না—তিনি ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেন। অথচ বিশ্বের বহু প্রান্তে আজও মাতৃত্ব মানেই অনিশ্চয়তা, ভয় আর কখনো কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। এই প্রেক্ষাপটে আজ ২৮ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য—“নিরাপদ মাতৃত্ব, স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যৎ”, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে একজন সুস্থ মা মানেই একটি সুস্থ জাতি।

একটি দিবস নয়, একটি দায়বদ্ধতা :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ৮০০ নারী গর্ভকালীন বা প্রসবকালীন জটিলতায় প্রাণ হারান। এর অধিকাংশ মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য—যদি সময়মতো চিকিৎসা ও যত্ন পাওয়া যেত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও নিরাপদ মাতৃত্ব এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। যদিও দেশের স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবুও শহর ও গ্রামের মধ্যে এখনও ব্যাপক বৈষম্য রয়ে গেছে।

মাতৃত্বের পথে চ্যালেঞ্জগুলোর দীর্ঘ ছায়া

প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা এখনও প্রসবকালীন সময়টিতে সঠিক পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পান না। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চল কিংবা দুর্গম গ্রামগুলোতে প্রসবকালীন জটিলতা মানেই জীবনের ঝুঁকি। সামাজিক কুসংস্কার, অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, ও নারীর প্রতি অবহেলা এই ঝুঁকিকে আরও তীব্র করে তোলে।

পরিসংখ্যান কি বলে?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২৪ সালে প্রতি লক্ষ্য জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৬৫ জন। এই হার গত দশকে কমলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তার ভিত মজবুত করতে হলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করাই হবে প্রথম পদক্ষেপ।

কেন এই দিবস গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একটি উচ্চারণ, একটি দাবি, একটি মানবিক আহ্বান। এটি মনে করিয়ে দেয়, একজন মাকে সুরক্ষা না দিলে একটি প্রজন্ম ঝুঁকিতে পড়ে। নিরাপদ মাতৃত্ব শুধু নারীর অধিকার নয়, এটি একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

যা করা জরুরি:

সমাধানের দিকনির্দেশনা ।।

প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন

প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ ও ধাত্রী নিয়োগ

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পুষ্টি কার্যক্রম বাড়ানো

বাল্যবিবাহ ও কুসংস্কার রোধে সামাজিক আন্দোলন,প্রসব-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা । সুস্থ  মা, সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ :মাতৃত্ব কখনোই মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। একজন মা যেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর সন্তান জন্ম না দেন, সেটিই হওয়া উচিত আমাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি।

বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক—প্রত্যেক মা যেন পায় শ্রদ্ধা, যত্ন, নিরাপত্তা ও ভালোবাসা। কারণ একটি দেশের উন্নয়ন শুরু হয় গর্ভের সেই প্রথম স্পন্দন থেকে।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

সন্দ্বীপে এসইডিপি’র আওতায় পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, প্রতিটি মা হোক মর্যাদার অধিকারী

পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:৩৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

২৮/০৫/২০২৫ইং…

মাতৃত্ব হোক নিরাপদ, প্রতিটি মা হোক মর্যাদার অধিকারী |

একজন মা শুধু একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেন না—তিনি ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেন। অথচ বিশ্বের বহু প্রান্তে আজও মাতৃত্ব মানেই অনিশ্চয়তা, ভয় আর কখনো কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। এই প্রেক্ষাপটে আজ ২৮ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য—“নিরাপদ মাতৃত্ব, স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যৎ”, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে একজন সুস্থ মা মানেই একটি সুস্থ জাতি।

একটি দিবস নয়, একটি দায়বদ্ধতা :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ৮০০ নারী গর্ভকালীন বা প্রসবকালীন জটিলতায় প্রাণ হারান। এর অধিকাংশ মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য—যদি সময়মতো চিকিৎসা ও যত্ন পাওয়া যেত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও নিরাপদ মাতৃত্ব এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। যদিও দেশের স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবুও শহর ও গ্রামের মধ্যে এখনও ব্যাপক বৈষম্য রয়ে গেছে।

মাতৃত্বের পথে চ্যালেঞ্জগুলোর দীর্ঘ ছায়া

প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা এখনও প্রসবকালীন সময়টিতে সঠিক পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পান না। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চল কিংবা দুর্গম গ্রামগুলোতে প্রসবকালীন জটিলতা মানেই জীবনের ঝুঁকি। সামাজিক কুসংস্কার, অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, ও নারীর প্রতি অবহেলা এই ঝুঁকিকে আরও তীব্র করে তোলে।

পরিসংখ্যান কি বলে?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২৪ সালে প্রতি লক্ষ্য জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৬৫ জন। এই হার গত দশকে কমলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তার ভিত মজবুত করতে হলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করাই হবে প্রথম পদক্ষেপ।

কেন এই দিবস গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একটি উচ্চারণ, একটি দাবি, একটি মানবিক আহ্বান। এটি মনে করিয়ে দেয়, একজন মাকে সুরক্ষা না দিলে একটি প্রজন্ম ঝুঁকিতে পড়ে। নিরাপদ মাতৃত্ব শুধু নারীর অধিকার নয়, এটি একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

যা করা জরুরি:

সমাধানের দিকনির্দেশনা ।।

প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন

প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ ও ধাত্রী নিয়োগ

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পুষ্টি কার্যক্রম বাড়ানো

বাল্যবিবাহ ও কুসংস্কার রোধে সামাজিক আন্দোলন,প্রসব-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা । সুস্থ  মা, সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ :মাতৃত্ব কখনোই মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। একজন মা যেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর সন্তান জন্ম না দেন, সেটিই হওয়া উচিত আমাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি।

বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক—প্রত্যেক মা যেন পায় শ্রদ্ধা, যত্ন, নিরাপত্তা ও ভালোবাসা। কারণ একটি দেশের উন্নয়ন শুরু হয় গর্ভের সেই প্রথম স্পন্দন থেকে।