১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস

বিশ্ব পরিবেশ দিবস (সংক্ষেপে WED) প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সম্মেলনে শুরু হয়েছিল।
১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৪ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। ২০২৩ সালে প্লাস্টিক-দূষণ বন্ধের আহ্বানে ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারাবিশ্বে দিবসটি পালিত হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিকমতো বজায় রেখে মানুষ যাতে এই পৃথিবীর বুকে অন্যান্য সমস্ত জীবের সাথে একাত্ম হয়ে এক সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য।
একবিংশ শতকে এসে সবচেয়ে বেশি প্লাষ্টিক দূষণ ঘটছে। প্রায় ৫০% প্লাষ্টিক দ্রব্য মানুষ মাত্র একবারের জন্য ব্যবহার করে, তারপর ছুড়ে ফেলে দেয়। বছরে যত পরিমাণ প্লাষ্টিক ছুড়ে ফেলা হয়, সেগুলিকে একত্র করলে আমাদের পৃথিবীকে চার বার আবর্তিত করে ফেলা যাবে! বর্তমানে যে পরিমাণ প্লাষ্টিক ব্যবহার করি তার মধ্যে মাত্র ৫% প্লাষ্টিক রিসাইকেল করতে পারি; Reduce, Reuse, Recycle শ্লোগানটি খুব একটা মানা হচ্ছে না। প্লাষ্টিকের মাইক্রোস্কোপিক কণা আমরা অজ্ঞাতসারে গ্রহন করি! প্লাষ্টিক আহারের কারণে প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন সামুদ্রিক পাখি ও কচ্ছপ এবং ১,০০,০০০ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী মারা যায়। বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছরে ১,৫০,০০০ টন প্লাষ্টিক সমুদ্রের মধ্যে ফেলা হয়। আমেরিকা একাই বছরে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন প্লাষ্টিকের বোতল ছুড়েএ ফেলে। প্লাষ্টিক বোতল তৈরি করতে বার্ষিক ৭২ বিলিয়ন গ্যালন জল এবং এক বিলিয়ন প্লাষ্টিক বোতল তৈরি করার জন্য ২৪ মিলিয়ন গ্যালন তৈল প্রয়োজন হয়।
সবুজ পরিবেশই আমাদের মন চিরসবুজ রাখতে পারে। পরিবেশ দূষণ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। “পরিবেশ দূষণ বর্তমানে একটি মারাত্মক সমস্যা, শুধু আমাদের চেষ্টায় এই সমস্যার নিরসন সম্ভব, খুব সম্ভবত আমরাই শেষ প্রজন্ম যারা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারি”। আমরা যদি পরিবেশ দূষণ না কমাতে পারি তাহলে আমারা বাঁচতে পারব না। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী কোরনা ভাইরাসের সংক্রমনের প্রক্কালে পরিবেশের উপর মানুষের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকান্ড সাময়িক বন্ধ থাকায় পরিবেশ যেন অনেকটা নির্মল হয়ে এসেছে। আশা করছি এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেন ভবিষৎ পরিকল্পনা প্রণীত হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকলের উদ্দেশ্যে আহ্Ÿান রেখে বলেন, “প্রত্যেকে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ এবং ভেষজ গাছ লাগান, আমাদের সন্তানদেরও এই পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক কাজ করার পরামর্শ দিন; যে কোনো ‘উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে বৃক্ষরোপণ এবং জলাধার সৃষ্টি বা সংরক্ষণ করতে হবে; নদী ড্রেজিং করে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে; বিভিন্ন দ্বীপে ও উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে; খালের উপর বক্স-কালভার্ট না করে দুই ধার দিয়ে রাস্তা নির্মান করুন বা এলিভেটেড রাস্তা করা যেতে পারে, এতে খাল খালের মতোই থাকবে ফলে সেখানে নৌকা চলাচল করতে পারবে, পরিবেশ রক্ষা পাবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে এবং বায়ুদূষণ কমবে।”
আসুন আমরা সবাই মিলে শ্লোগান ধরি “পরিবেশ বান্ধব শিল্প গড়ি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি; প্রকৃতি ও মানুষের বন্ধন, কখনো করো না খন্ডন; দখল হলে নদী, জীবন হারাবে গতি।” পরিবেশ রক্ষার চেতনায় উদ্ভাসিত দিনটি আমাদেরকে নিয়ে যাবে নতুন দিনের কাছে, যেখানে সকল ধরণের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে, পরিবেশ দূষণ, কার্বন নিঃসরণসহ পরিবেশ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড থাকবে না। এই চেতনায় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী উঠে দাঁড়াবে সবুজের আচ্ছাদনে পরিপূর্ণ হয়ে। এভাবেই প্রকৃতির সুন্দরতায় ভরে উঠবে সারাবিশ্বের সকল প্রান্তর।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

জুড়ীতে নিসচা’র সড়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস

পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:০১:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
বিশ্ব পরিবেশ দিবস (সংক্ষেপে WED) প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সম্মেলনে শুরু হয়েছিল।
১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৪ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। ২০২৩ সালে প্লাস্টিক-দূষণ বন্ধের আহ্বানে ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারাবিশ্বে দিবসটি পালিত হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিকমতো বজায় রেখে মানুষ যাতে এই পৃথিবীর বুকে অন্যান্য সমস্ত জীবের সাথে একাত্ম হয়ে এক সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য।
একবিংশ শতকে এসে সবচেয়ে বেশি প্লাষ্টিক দূষণ ঘটছে। প্রায় ৫০% প্লাষ্টিক দ্রব্য মানুষ মাত্র একবারের জন্য ব্যবহার করে, তারপর ছুড়ে ফেলে দেয়। বছরে যত পরিমাণ প্লাষ্টিক ছুড়ে ফেলা হয়, সেগুলিকে একত্র করলে আমাদের পৃথিবীকে চার বার আবর্তিত করে ফেলা যাবে! বর্তমানে যে পরিমাণ প্লাষ্টিক ব্যবহার করি তার মধ্যে মাত্র ৫% প্লাষ্টিক রিসাইকেল করতে পারি; Reduce, Reuse, Recycle শ্লোগানটি খুব একটা মানা হচ্ছে না। প্লাষ্টিকের মাইক্রোস্কোপিক কণা আমরা অজ্ঞাতসারে গ্রহন করি! প্লাষ্টিক আহারের কারণে প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন সামুদ্রিক পাখি ও কচ্ছপ এবং ১,০০,০০০ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী মারা যায়। বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছরে ১,৫০,০০০ টন প্লাষ্টিক সমুদ্রের মধ্যে ফেলা হয়। আমেরিকা একাই বছরে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন প্লাষ্টিকের বোতল ছুড়েএ ফেলে। প্লাষ্টিক বোতল তৈরি করতে বার্ষিক ৭২ বিলিয়ন গ্যালন জল এবং এক বিলিয়ন প্লাষ্টিক বোতল তৈরি করার জন্য ২৪ মিলিয়ন গ্যালন তৈল প্রয়োজন হয়।
সবুজ পরিবেশই আমাদের মন চিরসবুজ রাখতে পারে। পরিবেশ দূষণ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। “পরিবেশ দূষণ বর্তমানে একটি মারাত্মক সমস্যা, শুধু আমাদের চেষ্টায় এই সমস্যার নিরসন সম্ভব, খুব সম্ভবত আমরাই শেষ প্রজন্ম যারা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারি”। আমরা যদি পরিবেশ দূষণ না কমাতে পারি তাহলে আমারা বাঁচতে পারব না। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী কোরনা ভাইরাসের সংক্রমনের প্রক্কালে পরিবেশের উপর মানুষের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকান্ড সাময়িক বন্ধ থাকায় পরিবেশ যেন অনেকটা নির্মল হয়ে এসেছে। আশা করছি এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেন ভবিষৎ পরিকল্পনা প্রণীত হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকলের উদ্দেশ্যে আহ্Ÿান রেখে বলেন, “প্রত্যেকে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ এবং ভেষজ গাছ লাগান, আমাদের সন্তানদেরও এই পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক কাজ করার পরামর্শ দিন; যে কোনো ‘উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে বৃক্ষরোপণ এবং জলাধার সৃষ্টি বা সংরক্ষণ করতে হবে; নদী ড্রেজিং করে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে; বিভিন্ন দ্বীপে ও উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে; খালের উপর বক্স-কালভার্ট না করে দুই ধার দিয়ে রাস্তা নির্মান করুন বা এলিভেটেড রাস্তা করা যেতে পারে, এতে খাল খালের মতোই থাকবে ফলে সেখানে নৌকা চলাচল করতে পারবে, পরিবেশ রক্ষা পাবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে এবং বায়ুদূষণ কমবে।”
আসুন আমরা সবাই মিলে শ্লোগান ধরি “পরিবেশ বান্ধব শিল্প গড়ি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি; প্রকৃতি ও মানুষের বন্ধন, কখনো করো না খন্ডন; দখল হলে নদী, জীবন হারাবে গতি।” পরিবেশ রক্ষার চেতনায় উদ্ভাসিত দিনটি আমাদেরকে নিয়ে যাবে নতুন দিনের কাছে, যেখানে সকল ধরণের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে, পরিবেশ দূষণ, কার্বন নিঃসরণসহ পরিবেশ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড থাকবে না। এই চেতনায় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী উঠে দাঁড়াবে সবুজের আচ্ছাদনে পরিপূর্ণ হয়ে। এভাবেই প্রকৃতির সুন্দরতায় ভরে উঠবে সারাবিশ্বের সকল প্রান্তর।