
তেরখাদা উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও শিক্ষক হয়রানির অভিযোগ তুলে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।
২০২৫ সালের ৬ মার্চ, বটিয়াঘাটা উপজেলার কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানকে তেরখাদায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, তাকে সপ্তাহে কমপক্ষে দু’দিন অফিসে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয়নি। দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, যেদিন তিনি অফিসে আসেন, সেদিনও নানা অজুহাতে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ঝুলিয়ে রাখেন, অহেতুক প্রশ্ন তোলেন এবং অনেক সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ফলে এমপিও আবেদন, স্কেল অনুমোদন, ইএফটি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ মাসের পর মাস ঝুলে থাকে।
নাচুনিয়া জুনারী দাখিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, “আমার আবেদন একাধিকবার জমা দিলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইঙ্গিত দেওয়া হয়—টাকা না দিলে ফাইল চলবে না।”
একই অভিযোগ করেন কোলাপাটগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক, যার এমপিও আবেদন বহুদিন আটকে ছিল। শিক্ষক মোজাফফর হোসেন বলেন, “তিন মাস ধরে আমার ফাইল নিয়ে শুধু ঘুরিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ইউএনও স্যারের হস্তক্ষেপে স্বাক্ষর নেওয়া সম্ভব হয়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা বলেন, “বিষয়টি আমার জানা আছে। তাকে নিয়মিত অফিস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ হয়রানির শিকার হলে প্রমাণসহ অভিযোগ জানালে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তেরখাদায় স্থায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।
শহীদপুর খান এ সবুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, “নিয়মিত শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।”
আদমপুর বলর্ধনা শালিকদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইকরাম হোসেন বলেন, “স্থায়ী নিয়োগ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. জাহিদুর রহমান সংক্ষেপে বলেন, “সব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অফিসে এসে দেখা করুন।”
এ বিষয়ে খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, “তেরখাদায় স্থায়ী শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দ্রুতই স্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
বর্তমানে শিক্ষক সমাজ দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে, যাতে তেরখাদার শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে।