
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে অতিরিক্ত ভিজিট নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ৩০ জন খামারি।
গত ২২ জুলাই মহাপরিচালক বরাবর এ অভিযোগ করেন খামারিরা। এদিকে সাটুরিয়ার প্রান্তিক কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, যেকোন পশু চিকিৎসা ব্যয় বাবদ ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা ভিজিট নিয়ে থাকে এই পশু চিকিৎসক। এই পশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন কোন গ্রাম নেই অভিযোগ না আছে।
স্থানীয় খামারী ও কৃষকদের অভিযোগ, এই পশু চিকিৎসক বাড়ি গিয়ে পশু দেখে বলেন থাকেন,কম টাকার চিকিৎসা নিবেন,না বেশি টাকার চিকিৎসা নিবেন। দেশীয় ওষধে আপনার গরু ভালো হবে না। বিদেশী ওষধ আনতে হবে। এজন্য চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাবে বলে জানায় গরুর মালিকদের। কোন কৃষক বা খামারি তার ভিজিট দিতে না পারলে গরুর মালিককে বলেন, আপনার অসুস্থ্য গরু ভালো হবে না অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে আমার ভিজিটের টাকা দেন।
বেরোংয়া গ্রামের কৃষক মো. ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে আমার একটি গাভী ডেলিভারি হয়। ডেলিভারি করার সময় গরুর জ¦রায়ুর বের হয়ে যায়। আমি হাসপাতালের বড় ডা. মো. ইমরান হোসেনকে চিকিৎসার জন্য ফোনে ডেকে আনি বাড়িতে। সে জরায়ু ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ৫ হাজার টাকা ভিজিট নেয়। কিন্তু ডাক্তার চলে যাওয়ার পরের দিন আবার জরায়ু বের হয়ে যায়। পরের দিনও তাকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে আনি। তিনি জানান, এ গরু ভালো হবে না, অন্যত্র বিক্রি করে দেন। ডাক্তার নিজেই গরুর ব্যাপারিদের ডেকে এনে আমার দেড় লক্ষ টাকার গরু ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করে আরো ৫ হাজার টাকা ভিজিট নিয়ে চলে যায়।
জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক মো. মোকসেদ আলী জানান, তার গাভীর ওলান (দুধ) ফুলে যায়। সে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেনকে চিকিৎসার জন্য ডেকে বাড়িতে নিয়ে যান। তিন থেকে চারটি ইনজেকশন দিয়ে ৭ হাজার টাকা নেন। এতে রোগ ভালো না হলে পরের দিন সকালে আরো দুটি ইনকেশন দিয়ে আরো ৫ হাজার টাকা নেন। এত উন্নত চিকিৎসা দিয়েও তার গাভী ভালো হয়নি বলে জানান। তিনি আরো জানান, বাড়িতে এসেই এই কসাই ডাক্তার বলেন, নরমাল চিকিৎসা নিবেন,না বেশি দামের চিকিৎসা নিবেন। ডাক্তারের পরামর্শে উন্নতমানের চিকিৎসা নিয়েও গরুটি ভালো হয়নি বলে অভিযোগ করেন।
এই পশু চিকিৎসকের কাছে সর্বশান্ত হয়েছেন, ভাসিয়ালি কৃষ্টপুরের আ. মালেক, আজগর আলী, মো. মিজানুর রহমান,হরগজ গ্রামের শরাফত আলী,জগন্নাথপুর গ্রামের মোকছেদ আলী,দেলুয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামসহ অনেকে। এই পশুর মালিকদের দাবী, কসাই ডাক্তারের হাতে পশু ভালো না হলোও ভুল চিকিৎসা দিয়ে ভিজিটের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কথা হয় সাটুরিয়া ও ধামরাইয়ের কয়েকজন খামারির সঙ্গে। খামারিরা জানান, সাটুরিয়া প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন খামারি ভিজিট করার নামে প্রতি খামারির কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এই কসাই ডাক্তারের চাহিদা অনুয়ায়ী টাকা না দিলেই ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। আমরা কোন উপায় না পেয়ে মহাপরিচালক বরাবরে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। খামারিদের দাবী এ কসাই ডাক্তারকে অন্যত্র বদলি করে ভালো মানের ডাক্তার সাটুরিয়ায় দেওয়ার দাবী জানান তারা।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের লালিত পালিত গরু চিকিৎসার নামে মোটা অংকের ভিজিট নিয়ে থাকেন। এসব খামারি ও কৃষকদের অভিযোগ, তার চিকিৎসায় কোন গরু ভালো হয়নি বরং অনেক পশু মারা গেছে। তার চাহিদা অনুয়ায়ী ভিজিট না দিলে পশুর মালিকদের সাথে খারাপ আচারণ করেন। সে টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পশু ফার্মেসীর মালিকরা জানান, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে প্রতিদিন রোগী বাড়ির কল না দিলে মোবাইল কোর্টে জেল জরিমানার ভয়ভীতি দেখান। রোগী বাড়ি পাঠালে ওই পশুর মালিকরা এসে আমাদের গালিগালাজ করেন। কি ডাক্তার পাঠাইছেন। রোগী বাড়ি গিয়ে বলেন কম টাকার চিকিৎসা নিবেন না বেশি টাকার চিকিৎসা নিবেন। তবে দোকানে এসে পশুর মালিকরা জানায়, ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা ভিজিট নিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে কথা হয় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটি পশু চিকিৎসা করতে যে পরিমাণ ওষধ লাগে সবমিলিয়ে টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু কোন রোগীর কাছ থেকে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা ভিজিট নেওয়া হয়নি। ওষধের দামসহ টাকা নেওয়া হয়েছে। একটি কুচক্রীমহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে বলে তিনি দাবী করেন।