
“খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান”—এই মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০২৫-২৬ চক্রে ভালোনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী তালিকা থেকে দুস্থ নারীদের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো। ২ আগস্ট শনিবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে চর রাজিবপুর আলিম মাদ্রাসা মাঠে বঞ্চিত পরিবারগুলোর উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে আমরা ভিজিডি কার্ডের জন্য নাম দিয়েছিলাম। সেই নামগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহেব কর্তন করেছেন। আজ আমরা সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধনে এসেছি।”
মানববন্ধনে উপস্থিতরা ইউএনও’র বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও আনেন। অভিযোগে বলা হয়, “শোনা যাচ্ছে, ইউএনও সাহেব ৮ হাজার টাকা করে দাবি করছেন প্রতিটি কার্ড দেওয়ার জন্য। যেহেতু আমরা এত টাকা দিতে পারিনি, তাই আমাদের নাম কেটে ফেলা হয়েছে এবং টাকা দেওয়া মানুষদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।” ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, রাজিবপুর সদর ইউনিয়নে মোট ১২৪২ টি কার্ড এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউ এনওকে ২০% নাম দেয়া হয়েছে এর পরেও “আমি যে নামগুলো তালিকায় দিয়েছি, সেগুলো সবকটি প্রকৃত অসহায় মানুষের নাম ছিল। অথচ সেই তালিকা থেকে অর্ধেক বাদ দেওয়া হয়েছে। ইউএনও সাহেব ও চেয়ারম্যান দু’জনেই মিলে এসব নাম কর্তন করেছেন। তারা নিজেদের লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি কোনো সুবিধা নিইনি কিংবা কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি।” এছাড়াও বক্তব্য দেন ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহিদা খাতুন এবং ১, ২ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সালেহা খাতুন। তারা বলেন, “আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রকৃত দুস্থ নারীদের নাম তালিকায় দিয়েছি। অথচ সেই নাম গুলো কেটে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া কীভাবে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হলো, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।” এদিকে ইউএনও গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। কমিটির সদস্য ও রাজিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নুরুন্নবী বলেন, “আমাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হলেও, কে বা কারা তদন্ত করেছে, কিংবা তদন্ত রিপোর্ট কিভাবে জমা হয়েছে—তা আমার জানা নেই।” উপসহকারী কৃষি অফিসার জহুরুল হক, বলেন আমাকে তদন্ত কমিটির সদস্য করেছে আমি কোন চিঠি পাইনি, এক দিন পি আই অফিসের পিয়ন এসে বল্লো ইউ এন ও স্যার পাঠাইছে এখানে একটা স্বাক্ষর দিতে আমি বল্লাম আমি তো কোন তদন্ত করিনি স্বাক্ষর কি ভাবে দিবো, ইউ এন ও স্যার যেহেতু পাঠিয়েছে দাও স্বাক্ষর দিয়ে দেই, এ ভাবেই আমি স্বাক্ষর করেছি তবে আমি কোন তদন্ত করিনি । বাকি এক সদস্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমান এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি বঞ্চিত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে অবিলম্বে প্রকৃত দুস্থ নারীদের তালিকা পুনর্বহালের দাবি জানানো হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। চর রাজিবপুরে ভিজিডি বিতরণে স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এলো সমাজসেবামূলক কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ। স্থানীয়দের প্রশ্ন—স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে এসব কর্মসূচি কি আদৌ প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে পৌঁছায়? সময়মতো তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা বারবার ঘটবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।